রমজানে ইফতারে আমরা বাংলাদেশীরা ইফতার করার পর রাত ঘনিয়ে আসা পর্যন্ত ইরানিরা অপেক্ষা করে কেন? কোরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে চাই ।
ইতি
মোহাম্মদ ছবেদ আলী মাস্টার
( এস, এম, ছবেদ আলী )
সভাপতি
প্রত্যাশা বেতার শ্রোতা সংঘ
চাপরাইল বাজার-- কালীগজ্ঞ
ঝিনাইদহ---৭৩৫০
বাংলাদেশ
উত্তর :
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইরানীরা পবিত্র কুরআনের সূরা - ই বাকারার ১৮৭ নং আয়াত : অত:পর তোমরা রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর : ثُمَّ أَتِمُّوْا الصِّیَامَ إِلَی اللَّیْلِ এবং মহানবীর ( সা :) পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ : ) শিক্ষা , আদেশ ও রীতি নীতি অনুসরণ করার কারণে রাত হওয়া পর্যন্ত ইফতার করে না অর্থাৎ রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করেন ; অত:পর রাত হলে তারা ইফতার করে । সূর্য্য অস্ত গেলে অর্থাৎ সূর্য্য পশ্চিমে আদিক চক্রবাল রেখার নীচে অদৃশ্য হয়ে গেলেই কি তখন ইফতারের সময় হয়ে যায় ? আহলুল বাইতের ( আ: ) মতে এ সময় মাগরিবের নামাজ ও ইফতারের ওয়াক্ত ( সময় ) হয় না । বরং সূর্য্যাস্ত হলে পূর্ব দিগন্তে ( পূব আকাশে ) এক লালিমা দৃষ্ট হয় তা কিছু ক্ষণ অর্থাৎ ১৮ - ২০ মিনিট পরে বিলীন হয়ে যায় এবং ফিকহী পরিভাষায় এই লালিমা হচ্ছে পূর্ব দিগন্তের ( পূব আকাশের ) লালিমা
( الحمرة المشرقیة )
আর পূব আকাশের এ লালিমা মিটে গেলেই শরয়ী সূর্য্যাস্ত হয়ে যায় এবং পশ্চিম আকাশে যে লালিমা দৃষ্ট হয় তা হচ্ছে পশ্চিম আকাশের লালিমা বা শাফাক । আর সূর্য্যাস্তের ১ ঘন্টা পরে এই শাফাক ( পশ্চিম আকাশে লালিমা ) সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায় । আহলুল বাইতের ( আ : ) বর্ণিত হাদীস সমূহ অনুযায়ী যখন পূব আকাশে লালিমা বিলীন হয়ে যাবে ঠিক তখনই ইফতারের শরয়ী ওয়াক্ত ( সময় ) হবে । আর এই লালিমা বিলীন হওয়ার আগে ইফতার জায়েয হবে না ( অর্থাৎ এ সময় ইফতার করলে রোযা বাতিল ও ভঙ্গ হয়ে যাবে ও ক্বাযা ও কাফফারা অবধারিত ও ওয়াজিব হবে ) ।
শুধু আহলুল বাইতের ( আ : ) মাযহাবের অনুসারীরাই নয় এমনকি ২য় খলীফা হযরত উমর ( রা:) এবং ৩য় খলীফা হযরত উসমান ( রা: )ও উভয়ই মাগরিবের নামাজ পড়তেন এমন সময় যখন তাঁরা রাতের আঁধার দেখতে পেতেন । আর তা হত ইফতার করার আগে । অত:পর তাঁরা ইফতার করতেন । আর এটা হত রমযান মাসে । ( দ্র : মুয়াত্তা ইমাম মালিক , খ : ১ , পৃ : ৩৫৮ ) সংক্ষিপ্ত এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে রাত হলে অর্থাৎ ( সূর্য্যাস্তের পর ) পূব আকাশের লালিমা বিলীন হয়ে গেলেই ইফতারের প্রকৃত ও সঠিক সময়ের আগমন ঘটে । আর রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ করার ( ইতমাম )বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত
হওয়ার জন্য সূর্যাস্তের পর পূর্ব আকাশের লালিমা ( আল - হুমরাতুল মাশরিক্বীয়াহ্ ) বিলীন হয়ে গেলে মাগরিব নামাযের ওয়াক্ত এবং রাতের শুরু নিশ্চিত হওয়া যায় এবং এ সময়টা তখন ইফতারের নিশ্চিত সময় হয় এবং সম্পূর্ণ দিবস (ফজরের সময় থেকে রাত পর্যন্ত ) রোযা রাখাও সতর্কতামূলক ভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় । সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাত্র কয়েক মিনিট অপেক্ষা না করে ইফতার করার মাধ্যমে রোযা বাতিল করার ঝুঁকি নেওয়া যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয় ঠিক তেমনি তা পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশেরও লংঘন হতে পারে । তাই এ সতর্কতা অবলম্বন ।
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান